কঠোর অভিবাসন নীতির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে ৬ হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, এসব ভিসা বাতিলের পেছনে রয়েছে নানা আইন লঙ্ঘন, ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ, অপরাধে জড়ানো এবং জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির অভিযোগ।
মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানায়, যেসব শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই গাড়ি চালানোর সময় মাদকাসক্ত ছিলেন, কেউ কেউ জড়িত ছিলেন চুরি, হামলা ও অন্যান্য অপরাধে। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসবাদে সহায়তা’ এবং ‘ইহুদি-বিরোধী সহিংসতা’য় যুক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। যদিও এসব অভিযোগের ব্যাখ্যা বা নির্দিষ্ট প্রমাণ প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
এদিকে, বাতিল হওয়া ভিসাগুলোর মধ্যে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সরাসরি আইন ভঙ্গের প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। আরও ২০০-৩০০টি ভিসা বাতিল করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইনের ৩বি ধারা অনুযায়ী, যেখানে 'সন্ত্রাসী কার্যকলাপ'কে মানব জীবনের জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসনবিরোধী কড়াকড়ি ও নিরাপত্তা অজুহাতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর নজরদারিরই অংশ। চলতি বছর শুরুতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছিল। পরে সাক্ষাৎকার পুনরায় শুরুর সময় আরও কঠোর নিয়ম আরোপ করা হয়, যার মধ্যে অন্যতম ছিল আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট ও তৎসম্পর্কিত তথ্য সরবরাহের বাধ্যবাধকতা।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যারা যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট করে, বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রতি সহানুভূতি দেখায়, বা ইহুদি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত— তাদের শনাক্ত ও প্রতিরোধ করতে।
মে মাসে মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া এক বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, “শুধু জানুয়ারি থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। আরও অনেকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এমন অতিথিদের দেশে থাকতে দিতে পারি না যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।”
ডেমোক্র্যাট নেতারা এ পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলছেন, এটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার ও আইনি নিরাপত্তা লঙ্ঘন করছে। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসা লাখ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার অজুহাতে বৃহৎ শিক্ষার্থী সমাজকে হয়রানি করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক শিক্ষায় গবেষণাসংস্থা 'ওপেন ডোরস'–এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে বিশ্বের ২১০টিরও বেশি দেশ থেকে ১১ লাখের বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেছেন।
আপনার বিজ্ঞাপন এখানে