70°F শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মেনু

ভারতের অবস্থান অপরিবর্তিত: শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত দেওয়ার প্রশ্নই উঠছে না — বিবিসিকে দিল্লির শীর্ষ কর্মকর্তারা

Online Desk, Boston Bangla

প্রকাশ: ১৮ নভে ২০২৫ | নিউজটি দেখেছেন: ২১
ভারতের অবস্থান অপরিবর্তিত: শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত দেওয়ার প্রশ্নই উঠছে না — বিবিসিকে দিল্লির শীর্ষ কর্মকর্তারা

ভারতের কূটনৈতিক মহল ইঙ্গিত দিয়েছে—আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পরও তাকে নিয়ে দিল্লির অবস্থান বদলাচ্ছে না। তাকে বাংলাদেশের হাতে হস্তান্তর করার কোনো সম্ভাবনাও আপাতত নেই বলে জানিয়েছে দেশটির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। বিবিসিকে দেওয়া তাদের মন্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার ভারতীয় সিদ্ধান্ত এখনো অপরিবর্তিত।

রায় ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর ভারত শুধু একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া জানায়—তাদের নজরে বিষয়টি এসেছে এবং ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশি জনগণের স্বার্থ রক্ষায় ভারত অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে। এর বাইরে দিল্লি কোনো অবস্থান পরিবর্তনের আভাস দেয়নি।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট দেশত্যাগের পর থেকে শেখ হাসিনা ভারতে যে ‘সাময়িক আশ্রয়’ পেয়েছেন, তার নীতিগত অবস্থান ভারত এখনো একইভাবে বজায় রেখেছে। বিশেষ পরিস্থিতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপত্তার কারণে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে—এটাই দিল্লির ব্যাখ্যা। মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পরও ভারতের এ নীতি অপরিবর্তিত থাকবে বলেই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

শেখ হাসিনা প্রত্যর্পণ–বিষয়ে ভারতের ‘নীরবতা’

বাংলাদেশ গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ভারতকে একটি ‘নোট ভার্বাল’ পাঠিয়ে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানায়। ভারত কয়েক দিনের মধ্যেই চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও এরপর তারা এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, দুই দেশের অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তিতে এমন অনেক ধারা রয়েছে যার সুযোগ নিয়ে ভারত অনায়াসে প্রত্যর্পণ অনুরোধ নাকচ করতে পারে কিংবা বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখতে পারে।

তাদের মতে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ও রায় থাকা সত্ত্বেও এ অনুরোধ কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

ভারত কেন এখনো আশ্রয় দিয়ে রাখছে?

আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে এখন শেখ হাসিনা একজন দণ্ডিত ও পলাতক আসামি—এটা ভারতের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে পারে। কিন্তু দিল্লির কর্মকর্তারা দৃঢ়ভাবে বলেছেন, দিল্লি তার বর্তমান অবস্থান বজায় রাখবে এবং তাকে বাংলাদেশে পাঠানোর প্রশ্নই ওঠে না।

শিগগিরই ভারতকে ব্যাখ্যা দিতে হতে পারে কেন তারা দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিজেদের ভূখণ্ডে নিরাপত্তা দিচ্ছে। তবে দিল্লি কী বলবে তা অনুমান করা কঠিন নয়—“বিচারের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে, তাই তাকে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়”—এই যুক্তিই তারা সামনে আনতে পারে।

প্রত্যর্পণ চুক্তির সুযোগ–সুবিধা যেভাবে দিল্লিকে সহায়তা করছে

২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ–ভারত প্রত্যর্পণ চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা বলছে—
যে অপরাধ ‘রাজনৈতিক প্রকৃতির’, সে ক্ষেত্রে প্রত্যর্পণ অনুরোধ খারিজ করার অধিকার থাকে।

যদিও হত্যা, গণহত্যা, গুম, বিস্ফোরণ, সন্ত্রাসবাদ–এ ধরনের অপরাধ এই তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে; তবুও চুক্তিতে আরও কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে যা ভারত প্রয়োগ করতে পারে।

চুক্তি অনুযায়ী ভারত অনুরোধ নাকচ করতে পারে যদি—
অভিযোগগুলো ‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে, সরল বিশ্বাসে আনা হয়নি’ বলে মনে হয়।
অপরাধ ‘মিলিটারি অফেন্স’ হিসেবে বিবেচিত হয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণ করলে তার নিরাপত্তা বা মৌলিক অধিকার ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

ভারতের কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন—তারা চাইলে অনায়াসেই বলতে পারে যে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ন্যায়বিচার পাবেন না, সুতরাং তাকে হস্তান্তর করা সম্ভব নয়।

ফলে, ভারত ভবিষ্যতেও শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে তুলে দেবে—এমন সম্ভাবনা কার্যত নেই।