বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও স্বচ্ছভাবে আয়োজন করতে হবে এবং এর ফলাফল সবাইকে মেনে নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান মৌনির সাতৌরি।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা সফর শেষ করে ফেরার আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া অর্থনীতি টেকসই হতে পারে না, জনগণের জীবনমানও উন্নত হয় না। ফেব্রুয়ারির নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়, এবং ফলাফলের প্রতি সব পক্ষকে শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। স্থিতিশীলতার জন্য এটিই অপরিহার্য।”
সাতৌরির মতে, নির্বাচন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি ধাপ হলেও পরবর্তী সময়ে সব রাজনৈতিক পক্ষের ঐকমত্য ও সংস্কারের কার্যকর বাস্তবায়ন জরুরি। তিনি আরও জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকলেও মানবাধিকার রক্ষায় অগ্রগতি হবে পার্টনারশিপ গভীর করার প্রধান মাপকাঠি।
সফরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ইসাবেল উইসেলার-লিমা (লুক্সেমবার্গ), আরকাদিউস মুলারচিক (পোল্যান্ড), উরমাস পায়েত (এস্তোনিয়া) এবং ক্যাটারিনা ভিয়েরা (নেদারল্যান্ডস)। তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনসহ বিভিন্ন এনজিও, শ্রমিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সাংবিধানিক সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গেও তাঁদের আলোচনা হয়েছে।
সাতৌরি বলেন, “অতীতে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা হয়নি, বিচারব্যবস্থা স্বাধীন ছিল না, মতপ্রকাশ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাও সীমিত ছিল। অথচ এগুলো একটি কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য।” তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, নির্বাচনের পর নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ হবে।
এদিকে, নেদারল্যান্ডসের নতুন রাষ্ট্রদূত বোরিস ভ্যান বোমেল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ দল এ সপ্তাহেই বাংলাদেশে আসছে। আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার, আসন্ন নির্বাচন, বাণিজ্য, কৃষি এবং রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মতবিনিময় হয়।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেন, “ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে আমরা নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি।”
বোমেল জানান, নেদারল্যান্ডস গণতান্ত্রিক উত্তরণে বাংলাদেশের পাশে থাকবে এবং ইইউর পর্যবেক্ষণ মিশনকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন দেবে। আলোচনায় পানি ব্যবস্থাপনাও উঠে আসে। ইউনূস উল্লেখ করেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও উপকূলীয় এলাকা সুরক্ষায় ডাচ অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে।
আপনার বিজ্ঞাপন এখানে