বাংলাদেশের রাজনীতি কোন পথে? শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক মন্তব্যে আলোচনার ঝড়
বস্টন বাংলা আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রয়টার্সে দেওয়া সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন সব মন্তব্য করেছেন,
যা শুধু তার দল আওয়ামী লীগের নয়, পুরো দেশের রাজনীতিকেই নতুন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
এই প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করা হলো সেই সাক্ষাৎকারের মূল বক্তব্য, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এবং রাজনৈতিক তাৎপর্য।
সাক্ষাৎকারের পটভূমি
২০২৫ সালের ২৯ অক্টোবর, রিটায়ার্সে প্রকাশিত এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা প্রথমবার প্রকাশ্যে কথা বলেন জুলাই‑আগস্টের ছাত্র আন্দোলন এবং
তাকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে। এই সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয় ভারতের নয়াদিল্লিতে,
যেখানে তিনি বর্তমানে অবস্থান করছেন বলে নিশ্চিত করেছে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
এটি ছিল তাঁর নির্বাসন‑পরবর্তী প্রথম দীর্ঘ সাক্ষাৎকার।
নির্বাচন ও অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে
রয়টার্সকে শেখ হাসিনা বলেন—“If the Awami League is not allowed to contest, millions of voters will boycott.”
অর্থাৎ, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ না দিলে জনগণের ভোটাধিকারই অকার্যকর হয়ে পড়বে।
তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান রাজনৈতিক কাঠামোতে তাঁর দলের প্রতি বৈরিতা তৈরি করা হয়েছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক।
নেতৃত্ব ও ক্ষমতা নিয়ে অবস্থান
প্রশ্ন ওঠে, তিনি কি আবার ক্ষমতায় ফিরতে চান? শেখ হাসিনার জবাব ছিল স্পষ্ট—“It’s really not about me or my family.”
তিনি জানান, ক্ষমতা নয়, তাঁর উদ্বেগ দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নির্বাচনের ন্যায়সংগত কাঠামো পুনরুদ্ধার।
এই বক্তব্যে অনেক বিশ্লেষক দেখছেন এক ধরনের নেতৃত্ব‑রূপান্তরের ইঙ্গিত।
ছাত্র আন্দোলন ও মানবাধিকার প্রসঙ্গ
২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনে নিহত ও আহতদের বিষয়ে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন,
তবে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তাঁর মতে, চলমান বিচার প্রক্রিয়া “politically motivated”— অর্থাৎ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা‑নির্ভর।
আওয়ামী লীগের অনেক নেতা‑কর্মী বর্তমানে গ্রেফতার বা আত্মগোপনে আছেন, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
রয়টার্সের প্রতিবেদন প্রকাশের পর The Guardian, Al Jazeera, BBC, এবং The Hindu—সবাই আলাদা বিশ্লেষণ ছেপেছে।
তাঁদের মতে, শেখ হাসিনার এই সাক্ষাৎকার শুধু আত্মপক্ষ সমর্থন নয়,
বরং বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন বিতর্কের সূচনা।
Al Jazeera মন্তব্য করে, “Her words are less about power and more about legacy.”
বিশ্লেষণ: রাজনীতির দিক কোন পথে?
এই সাক্ষাৎকারের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্পষ্ট দুটি স্রোত দেখা যাচ্ছে—
একদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার‑প্রচেষ্টা, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পুনর্গঠনের প্রশ্ন।
বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে তিনি হয়তো সক্রিয় রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে থাকলেও
দলীয় ভবিষ্যৎ ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষায় পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার চালিয়ে যাবেন।
উপসংহার
শেখ হাসিনার এই সাক্ষাৎকার বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে—
দেশ কি নতুন নেতৃত্বের দিকে যাচ্ছে, নাকি পুরোনো ভারসাম্য আবার ফিরে আসবে?
রয়টার্সের প্রতিবেদনে যেভাবে তিনি ‘জনগণের ভোটাধিকার’কে অগ্রাধিকার দিয়েছেন,
তা একদিকে রাজনৈতিক বার্তা, অন্যদিকে ইতিহাসের নতুন মোড়ের পূর্বাভাসও বটে।
তথ্যসূত্র: Reuters, The Guardian, Al Jazeera, The Hindu, BBC, TBS News, Views Bangladesh
আপনার বিজ্ঞাপন এখানে