79°F বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মেনু

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এর খসড়া পাঠাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

Online Desk, Boston Bangla

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৫ | নিউজটি দেখেছেন: ৩
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এর খসড়া পাঠাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

চলমান রাজনৈতিক রূপান্তরের প্রেক্ষাপটে প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর পূর্ণাঙ্গ খসড়া ও এর সঙ্গে সংযুক্ত আটটি অঙ্গীকারনামা দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

শনিবার (১৬ আগস্ট) সনদের খসড়া পাঠানো হয়। দলগুলোর পক্ষ থেকে যদি ভাষা, শব্দ চয়ন, বাক্যগঠন কিংবা বিষয়বস্তু নিয়ে কোনো মন্তব্য বা আপত্তি থাকে, তা আগামী ২০ আগস্ট (বুধবার) বিকেল ৪টার মধ্যে লিখিতভাবে কমিশনের কার্যালয়ে জমা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সনদের প্রস্তাবনায় বলা হয়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এবার ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান- যা জনগণের দীর্ঘদিনের অধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিকে সামনে এনেছে- তার ভিত্তিতেই নতুন এক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের রূপরেখা হিসেবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ প্রণীত হয়েছে।

অঙ্গীকারনামার মূল পয়েন্টসমূহ:

সনদের সঙ্গে দেওয়া আটটি অঙ্গীকারনামায় রাজনৈতিক দলগুলো যা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, তা সংক্ষেপে নিচে তুলে ধরা হলো:
১. গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় জনগণের সংগ্রামের স্বীকৃতি: ২০২৪ সালের গণআন্দোলনে জনগণের আত্মত্যাগ, জীবনদান ও ত্যাগ-তিতীক্ষার স্বীকৃতি দিয়ে, দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গৃহীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি।

২. সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতকরণ: সনদের সকল বিধান ও সিদ্ধান্ত সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যদি বিদ্যমান সংবিধান বা আইনের সঙ্গে কোনো বিরোধ দেখা দেয়, তবে সনদের বিধানকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

৩. ব্যাখ্যার চূড়ান্ত কর্তৃত্ব সুপ্রিম কোর্টে: সনদের কোনো ধারা বা প্রস্তাবের ব্যাখ্যা প্রয়োজন হলে, তা চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করবেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

৪. সনদের বৈধতা প্রশ্নাতীত: সনদের বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা বা জারির অধিকার সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না।

৫. ব্যবস্থাগত সংস্কারে অঙ্গীকার: বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন, প্রশাসন, দুর্নীতি দমনসহ রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামোর সংস্কারে সনদে প্রস্তাবিত সুপারিশ অনুযায়ী সংবিধান ও আইন সংশোধনের অঙ্গীকার।

৬. গণঅভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি: ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের সংগ্রামের অংশ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

৭. শহীদদের মর্যাদা ও বিচার নিশ্চিতকরণ: আন্দোলনে নিহতদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা, পরিবারদের সহায়তা, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সব হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করা হবে।

৮. অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব কার্যকর: যে প্রস্তাবগুলো তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নের উপযোগী, সেগুলো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করবে।

ঐকমত্যের ভিত্তিতে আগামীর পথচলা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক রূপান্তরের একটি ঐতিহাসিক দলিল। এতে অন্তর্ভুক্ত সুপারিশসমূহ রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত ঐক্যের ভিত্তিতে গৃহীত হয়েছে, যা জনগণের অভিপ্রায়ের প্রতিনিধিত্ব করে।

এই সনদ এবং এর অঙ্গীকারনামাগুলো যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশে একটি নতুন রাজনৈতিক অধ্যায় সূচিত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কমিশন আশা করছে, রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনমূলক মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত দলিলটি শিগগিরই গ্রহণযোগ্য রূপ পাবে।