আজাদ খান
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাটি আমাদের সমাজের গভীর নৈতিক অবক্ষয়ের এক করুণ দৃষ্টান্ত। একজন মৃত রাজমিস্ত্রি হারুন মিয়ার লাশ দাফনের আগে সুদের টাকা পরিশোধের দাবিতে যে বাধা দেওয়া হয়েছে, তা কেবল অমানবিকতাই নয়, এটি আইনের চোখেও একটি গুরুতর অপরাধ। এই ধরনের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরও বাড়তে পারে, যা সমাজের জন্য মারাত্মক হুমকি। এই ঘটনা কেবল নৈতিকভাবে নিন্দনীয় নয়, এটি চাঁদাবাজির মতো একটি ফৌজদারি অপরাধও বটে।
আইনি বিশ্লেষণ: একটি গুরুতর অপরাধের স্পষ্ট উদাহরণ
আইন অনুযায়ী, কোনো পাওনাদার তার পাওনা আদায়ের জন্য আইনি পথ অবলম্বন করতে পারেন। কিন্তু মৃত ব্যক্তির প্রতি এমন অসম্মানজনক আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি সরাসরি ফৌজদারি অপরাধের আওতায় পড়ে।
দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা জরুরি
এই ঘটনা প্রমাণ করে, আমাদের সমাজে আইনের প্রয়োগের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি বেপরোয়া হয়ে উঠছে। নাটোরে একটি মৃতদেহ কবর থেকে তুলে জনসমক্ষে পুড়িয়ে ফেলার মতো ঘটনার সঙ্গে এর মিল খুঁজে পাওয়া যায়, যা সমাজে অপরাধপ্রবণতার গভীরতা তুলে ধরে।
এই বর্বর প্রথার বিস্তার ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। পুলিশকে শুধু খোঁজখবর নিয়েই ক্ষান্ত হলে চলবে না, ভুক্তভোগী পরিবারকে মামলা করতে উৎসাহিত করতে হবে এবং অপরাধীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এই ধরনের অপরাধকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিলে তা আমাদের সমাজের মানবিক মূল্যবোধ ও আইনি কাঠামোকে দুর্বল করে দেবে।
মৃত ব্যক্তির প্রতি সম্মান রক্ষা করা শুধু ধর্মেরই শিক্ষা নয়, এটি একটি সভ্য সমাজের মৌলিক ভিত্তি। যখন মৃতদেহকেও জিম্মি করে অবৈধ অর্থ আদায় করা হয়, তখন তা সমগ্র সমাজের প্রতি একটি সতর্কবার্তা। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কঠোর আইনি পদক্ষেপ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক প্রতিরোধের বিকল্প নেই।
লেখকঃ আজাদ খান, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা।
আপনার বিজ্ঞাপন এখানে