70°F শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মেনু

জুলাই সনদকে ঘিরে নতুন বিতর্ক: ঐকমত্যের বদলে বিভাজনের ইঙ্গিত দিচ্ছে কমিশন?

Online Desk, Boston Bangla

প্রকাশ: ১৬ অক্টো ২০২৫ | নিউজটি দেখেছেন: ৩১
জুলাই সনদকে ঘিরে নতুন বিতর্ক: ঐকমত্যের বদলে বিভাজনের ইঙ্গিত দিচ্ছে কমিশন?

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৭ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলো বহুল আলোচিত ‘জুলাই সনদ’-এ স্বাক্ষর করবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—সকল দল কি শেষ পর্যন্ত এতে স্বাক্ষর করবে? সম্প্রতি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সনদের কপি পাঠিয়েছে, আর সেই কপিই এখন তৈরি করছে নতুন বিতর্কের ঝড়।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই কপিতে ঐক্যের চেয়ে বিভাজনের ইঙ্গিতই বেশি স্পষ্ট। কমিশনের প্রাথমিক কথা ছিল—যেসব বিষয়ে সব দল একমত হবে, কেবল সেসব বিষয়ই সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কিন্তু পাঠানো খসড়ায় দেখা যাচ্ছে, ভিন্নমতের বিষয়গুলোও যুক্ত করা হয়েছে, এমনকি কোন দল কোন বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছে সেটিও উল্লেখ রয়েছে।

অনেক রাজনৈতিক নেতা বলছেন, শুরুতে এমন কিছু ছিল না। তাদের মতে, ঐকমত্যে পৌঁছানো বিষয় নিয়েই সনদটি চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, কমিশন যেন নিজের অজান্তেই রাজনৈতিক বিভাজনের রাস্তা প্রশস্ত করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ বিতর্কিত প্রস্তাব আগামী নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে অপ্রাসঙ্গিক

উদাহরণস্বরূপ, সনদের ৪ নম্বর প্রস্তাবে সংবিধান সংশোধন পদ্ধতিতে বলা হয়েছে—নিম্নকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ও উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনুমোদন লাগবে। অথচ বিশ্বের কোনো গণতান্ত্রিক দেশের উচ্চকক্ষে এমন ক্ষমতা নেই। এই প্রস্তাবে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল আপত্তি জানিয়েছে, কারণ উচ্চকক্ষ এখনো গঠিতই হয়নি।

একইভাবে, ১১ নম্বর প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতিকে বিভিন্ন কমিশনের নিয়োগে একক ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে—যা সংসদীয় গণতন্ত্রের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এতে রাষ্ট্রপতির হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া ১৫ নম্বর প্রস্তাবে বলা হয়েছে—প্রধানমন্ত্রী দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না। বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, গোটা বিশ্বের গণতন্ত্র চর্চার প্রেক্ষাপটেই অবাস্তব ও বিপজ্জনক প্রস্তাব। এতে রাজনৈতিক দলের চেইন অব কমান্ড নষ্ট হয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি হতে পারে।

আরও বিতর্কিত প্রস্তাব এসেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে। যেখানে আগে সরলভাবে এই ব্যবস্থা চালু করার কথা বলা হয়েছিল, সেখানে এখন কমিশন প্রস্তাব করেছে জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া—যা বাস্তবে কার্যকর করা প্রায় অসম্ভব। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এই জটিলতা কার স্বার্থে যুক্ত করা হলো?

অন্যদিকে, পিআর পদ্ধতি (Proportional Representation) নিয়েও এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক চলছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি মূলত জামায়াতের একটি রাজনৈতিক কৌশল, যা এখন কমিশনের সনদেও স্থান পেয়েছে।

এছাড়া ২৬ নম্বর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সব আন্তর্জাতিক চুক্তি সংসদের অনুমোদনসাপেক্ষ হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক চুক্তিই গোপনীয় হয়, যেমন সাম্প্রতিক মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি। ফলে এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এমন বহু প্রস্তাব রয়েছে যা সরকার পরিচালনায় অপ্রয়োজনীয় জটিলতা ও ধীরগতি সৃষ্টি করতে পারে। যেমন, একাধিক কর্মকমিশন গঠনের প্রস্তাব, দুর্নীতি দমন কমিশনকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান করার দাবি, বা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে হস্তক্ষেপমূলক ধারা—যা অনেকের মতে সরাসরি গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপের শামিল

বিশ্লেষকদের মতে, জুলাই সনদের মূল চেতনা হওয়া উচিত ছিল ঐক্য ও গণতন্ত্রে উত্তরণ, বিভক্তি নয়। এখন প্রশ্ন হলো—সব দল যদি সনদে স্বাক্ষর করেও, বাস্তবে তা কার্যকর হবে কীভাবে?
যে দল কোনো প্রস্তাবে একমত নয়, তারা ক্ষমতায় এলে তা কার্যকর করবে কেন?
অতএব, এই সনদের লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন, রাজনৈতিক চাপিয়ে দেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত নয়।