২০২৪ সালের অক্টোবরে জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্ত ও বিচার করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নতুনভাবে গঠন করা হয়। গঠন করা হয় তিন সদস্যের বিচারক প্যানেল, প্রসিকিউশন টিম এবং তদন্ত সংস্থা। তদন্ত শুরুর প্রথম দিন থেকেই কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রায় সাত মাসের অনুসন্ধান শেষে, তদন্ত সংস্থা ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়। এই প্রতিবেদনে ৮১ জন সাক্ষীর জবানবন্দি এবং জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী ১,৪০০ মানুষের মৃত্যুর তথ্য সংযুক্ত করা হয়।
এরপর ১ জুন, পলাতক শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক চার্জশিট দাখিল করে প্রসিকিউশন। সেখানে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশসহ পাঁচটি গুরুতর অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়।
সেদিনই দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আদালতের পুরো কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরও হাজির না হওয়ায় পলাতক হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের পক্ষে আদালতই আইনজীবী হিসেবে আমির হুসেনকে দায়িত্ব প্রদান করে।
১০ জুলাই তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করা হয়। একই দিনে সাবেক আইজিপি মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন জানান।
৩ আগস্ট শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। শহীদ পরিবার, আহত ব্যক্তিরা, চিকিৎসক, সমন্বয়ক, পুলিশ কর্মকর্তা, সাংবাদিক, গবেষক ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষ্য প্রদান করেন।
২৮ কার্যদিবসের শুনানি শেষে ৮ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়।
১২ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু হয়। প্রসিকিউশন জানায়—শুধু আন্দোলন দমনে আইন–শৃঙ্খলা বাহিনী ৩ লাখ ৫ হাজার রাউন্ড গুলি ব্যবহার করেছে, যার মধ্যে ঢাকাতেই নিক্ষেপ করা হয়েছে ৯৫ হাজারের বেশি।
২৩ অক্টোবর যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়ার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।
পরবর্তীতে ১৩ নভেম্বর, ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা ঘোষণা করেন—১৭ নভেম্বর রায় দেওয়া হবে।
প্রসিকিউশন তাদের পেশ করা পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণে জমা দিয়েছে ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার দলিল, যেখানে রয়েছে ৬৯টি অডিও ক্লিপ, ৩টি মোবাইল নম্বরের সিডিআর, এবং হত্যাকাণ্ডের ১৭টি ভিডিও আলামত।
আপনার বিজ্ঞাপন এখানে