79°F রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মেনু

দুঃসময়ে নিষ্ক্রিয় হাইব্রিড নেতারা এখন সক্রিয়, ক্ষোভ বাড়ছে ত্যাগী কর্মীদের মধ্যে

Online Desk, Boston Bangla

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৫ | নিউজটি দেখেছেন: ৪৯
দুঃসময়ে নিষ্ক্রিয় হাইব্রিড নেতারা এখন সক্রিয়, ক্ষোভ বাড়ছে ত্যাগী কর্মীদের মধ্যে

৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নিজেদের পুনর্গঠন ও রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও সুসংহত করার চেষ্টা করছে। তবে এই নতুন পরিস্থিতিতে দলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় ও সুযোগসন্ধানী ‘হাইব্রিড’ নেতাদের উপস্থিতি নিয়ে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ তীব্র হচ্ছে। এই নেতারা, যারা দুঃসময়ে মামলা-হামলার ভয়ে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছিলেন, এখন সক্রিয় হয়ে দলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে, যারা বিগত সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, সেইসব ‘ত্যাগী’ ও পরীক্ষিত কর্মীরা নিজেদের কোণঠাসা মনে করছেন। দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত এই অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।

 

সুবিধাবাদীদের দৌরাত্ম্য ও দলের ওপর প্রভাব

দলীয় সূত্র থেকে জানা যায়, যারা ১৫ বছর ধরে দলের দুর্দিনে বিদেশে আরাম-আয়েশে ছিলেন, তারা এখন দেশে ফিরে নিজেদের ‘নির্যাতিত নেতা’ প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। এদের অনেকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মনোনয়ন পেতে তদবির ও লবিংয়ে ব্যস্ত। অনেক ক্ষেত্রে তারা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে নানা অপকর্মেও জড়িয়ে পড়ছেন। উদাহরণস্বরূপ, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা ও ময়মনসিংহের কয়েকটি এলাকার কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে সেখানে নিষ্ক্রিয় ও আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পদ দেওয়া হয়েছে। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর এবং কুমিল্লার মেঘনাতেও এমন ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে, যা দলের মধ্যে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করা কিছু সুবিধাবাদী নেতা এখন তৃণমূলের ত্যাগী কর্মীদের ওপর খবরদারি করছেন। দলের কেন্দ্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন সড়ক ও পাড়া-মহল্লায় তাদের ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও তাদের আনাগোনা বেড়েছে, যা অনেক ত্যাগী নেতাকে বিরক্ত করছে। এসব ব্যক্তি বিএনপির নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছেন, যার দায় শেষ পর্যন্ত দলের ওপর এসে পড়ছে।

 

বিএনপির ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি এবং হাইকমান্ডের নির্দেশনা

এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সুবিধাবাদী ও ‘বসন্তের কোকিল’ নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তিনি সতর্ক করেছেন যে যারা দুঃসময়ে দলের পাশে ছিলেন, ভবিষ্যতে তারাই নেতৃত্বে আসবেন। দল এরই মধ্যে এই ধরনের অভিযোগের বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিগত ১৭ বছরের আন্দোলনে কার কী ভূমিকা ছিল, তা দলের কাছে পরিষ্কার। তিনি দৃঢ়ভাবে জানান, দলের পক্ষ থেকে এই ভূমিকাগুলো মূল্যায়ন করা হবে এবং মনোনয়ন থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে তা প্রতিফলিত হবে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, যারা দলের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং অভিযোগ পেলে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল জানান, অনেক ত্যাগী নেতা লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন এবং তিনি নিজেও কিছু অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। এসব সুবিধাবাদীর কারণে ত্যাগী ও নির্যাতিত কর্মীরা বঞ্চিত হচ্ছেন, যা মোটেও কাম্য নয়। দল হাইকমান্ডের কঠোর নির্দেশের কারণে এসব হাইব্রিড নেতাদের অনুপ্রবেশ রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

এই প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট যে বিএনপি একটি কঠিন অভ্যন্তরীণ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ত্যাগী ও পরীক্ষিত কর্মীদের ধরে রাখা এবং একই সাথে সুযোগসন্ধানী হাইব্রিডদের নিয়ন্ত্রণ করা এখন দলের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

আপনি কি মনে করেন, বিএনপির এই কঠোর অবস্থান দলের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার এবং কর্মীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট কার্যকর হবে?