আমেরিকা একটি দেশ, যার আত্মা গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, জাতি ও ইতিহাসের সেতুবন্ধনে। এই বৈচিত্র্যই আমেরিকার মূল ভিত্তি, এর শক্তি এবং গণতন্ত্রের প্রকৃত সৌন্দর্য। ‘E Pluribus Unum’ ‘বহুত্বের মাঝে ঐক্য’ এই মন্ত্র শুধু একটি ঐতিহাসিক স্লোগান নয়, বরং একটি চলমান বাস্তবতা, যা প্রতিদিন আমেরিকার প্রতিটি রাজ্যে, শহরে এবং পাড়া-মহল্লায় প্রকাশ পায়।
এই ডাইভারসিটি নতুন কিছু নয়। আফ্রিকান আমেরিকানদের সংগ্রাম, ল্যাটিনো অভিবাসীদের শ্রম, এশীয় আমেরিকানদের বুদ্ধিবৃত্তিক অবদান কিংবা মুসলিম, ইহুদি, হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সহাবস্থান সব মিলিয়ে আমেরিকার মাটি এক সুবর্ণ মিশ্রণ।
কিন্তু আজকের পৃথিবীতে যখন পরিচয়ের সংকোচন, জাতিগত বিদ্বেষ এবং বৈষম্যের রাজনীতি মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে, তখন ডাইভারসিটির গুরুত্ব নতুনভাবে অনুভব করা জরুরি। আমেরিকার গণতন্ত্র শুধু সংবিধানের শর্তে টিকে নেই, এটি টিকে আছে কারণ এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ কথা বলতে পারে, ভোট দিতে পারে, সংস্কৃতি পালন করতে পারে এবং ভিন্নমত রাখতে পারে অধিকার সংরক্ষণের সেই উদার ভিত্তিতে।
ডাইভারসিটি আমেরিকার অর্থনীতিকেও সমৃদ্ধ করেছে। সিলিকন ভ্যালি থেকে শুরু করে ব্রঙ্কসের ছোট ব্যবসা পর্যন্ত, অভিবাসীদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও কঠোর পরিশ্রম এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বহুজাতিক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি চিন্তার পরিধিকে প্রসারিত করে। এমনকি সঙ্গীত, ফ্যাশন এবং প্রযুক্তির মতো সৃজনশীল শিল্পেও বহুজাতিক অংশগ্রহণ একটি অনন্য মার্কিন অভিজ্ঞতা তৈরি করেছে।
তবুও প্রশ্ন থেকে যায় এই বৈচিত্র্যের প্রতি আমরা যথেষ্ট যত্নবান কি? যখন অভিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, মুসলিম নারীদের হিজাব নিয়ে ব্যঙ্গ করা হয়, বা কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বিচারবহির্ভূত সহিংসতা চলে, তখন ডাইভারসিটি কেবল একটি ধারণা নয়, তা হয়ে দাঁড়ায় একটি পরীক্ষা আমাদের নৈতিক সাহসের পরীক্ষা।
আমরা যারা অভিবাসী, আমাদের দায়িত্ব এই ডাইভারসিটির পরিধি রক্ষা করা। আমাদের সন্তানেরা যেন গর্ব করে বলতে পারে, “আমি এমন একটি দেশে জন্মেছি, যেখানে আমার পরিচয় নয়, আমার মানবিকতা মূল বিষয়।”
আসুন, আমেরিকাকে শুধু ডাইভারসিটির দেশ হিসেবে নয়, বরং ডাইভারসিটিকে পূর্ণতা দেয় এমন একটি ন্যায়, সমতা ও ভালোবাসার দেশ হিসেবে গড়ে তুলি।
আপনার বিজ্ঞাপন এখানে