79°F রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মেনু

দলীয় শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর অবস্থানে বিএনপি, সাত হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

Online Desk, Boston Bangla

প্রকাশ: ২৭ সেপ্টে ২০২৫ | নিউজটি দেখেছেন: ২১
দলীয় শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর অবস্থানে বিএনপি, সাত হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিজেদের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা আরও দৃঢ় করতে মাঠে নেমেছে বিএনপি। দলটির উচ্চপর্যায়ের নেতারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন—যে পর্যায়ের নেতাকর্মীই হোন না কেন, দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করলে ছাড় দেওয়া হবে না।

দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ভঙ্গ, চাঁদাবাজি, ভাঙচুর ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ইতিমধ্যে সারা দেশে প্রায় সাত হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব অভিযোগ ছড়িয়ে পড়লে দলকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে—এমন আশঙ্কায় সেসব নিয়েও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

“জিরো টলারেন্স” বার্তা

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “দেশের যেখানেই অভিযোগ মিলছে, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা যত তথ্য পেয়েছি, সবকটির বিরুদ্ধেই সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিয়েছি।” তিনি আরও জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ বিষয়ে কোনো আপস করছেন না এবং তিনি “জিরো টলারেন্স” নীতি অনুসরণ করছেন।

তারেক রহমানও সম্প্রতি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানিয়েছেন—দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দুর্নীতি ও অসদাচরণের দায়ে ইতিমধ্যে সাত হাজারের বেশি সদস্যের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কেউ বহিষ্কৃত হয়েছেন, কেউবা পদ হারিয়েছেন।

নেতাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

বিএনপির দপ্তর সূত্র বলছে, কেবল ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের প্রায় ৩ হাজার ২০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বিএনপির প্রায় ১,৮০০ জনের মধ্যে ৮০০ জন বহিষ্কৃত হয়েছেন, ৫০ জনের পদ স্থগিত করা হয়েছে।

অন্তত ৭০০ জন কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন, ১০০ জনকে সতর্ক করা হয়েছে এবং ১৫০ জনকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

ছাত্রদলে বহিষ্কার হয়েছেন ৪০০ জন, নোটিশ পেয়েছেন আরও ৬০০ নেতা-কর্মী।

স্বেচ্ছাসেবক দলে ১০০ জন বহিষ্কার ও ১৫০ জন নোটিশ পেয়েছেন।

যুবদলেরও শতাধিক নেতা-কর্মী বহিষ্কৃত হয়েছেন।

যদিও অভিযোগের প্রমাণের ভিত্তিতে অনেকের বহিষ্কারাদেশ পুনর্বিবেচনাও করা হচ্ছে।

“ক্লিন ইমেজ” প্রার্থীদের অগ্রাধিকার

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি এবার মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে। দলটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী—দখলদারি, চাঁদাবাজি বা কোনো বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। তারেক রহমান একাধিক বৈঠকে শীর্ষ নেতাদের সতর্ক করে বলেছেন, “আগামী নির্বাচন হবে কঠিনতম লড়াই। জনগণের আস্থা নিয়েই জিততে হবে, বিতর্কিত কাউকে টিকিট দেওয়া হলে তা দলীয় ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর হবে।”

বিভ্রান্তি ও ভুয়া পরিচয়ে অপকর্ম

দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, সরকারের পতনের পর কিছু নেতা-কর্মী ক্ষমতার করিডোরের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন ভেবে অতিউৎসাহী হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ নিজ এলাকায় প্রভাব বিস্তার শুরু করেছেন, সালিশ-বিচারের নামে অর্থ আদায় করছেন, এমনকি জমি দখল ও পারিবারিক কলহে জড়াচ্ছেন। অভিযোগ পেলেই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, প্রয়োজনে প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া নব্য বিএনপির নামে কিছু গ্রুপও সক্রিয় হয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের মাধ্যমে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে আশঙ্কায় আপাতত নতুন সদস্য গ্রহণ প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে হাইকমান্ড।