79°F রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মেনু

ডিপ্লোমা টেকনোলজিস্ট ও প্রকৌশলীদের আন্দোলন: বাস্তবতা ও যৌক্তিকতা

Online Desk, Boston Bangla

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৫ | নিউজটি দেখেছেন: ৩০
ডিপ্লোমা টেকনোলজিস্ট ও প্রকৌশলীদের আন্দোলন: বাস্তবতা ও যৌক্তিকতা

সম্প্রতি বুয়েট শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের পাশাপাশি ডিপ্লোমা টেকনোলজিস্ট ও প্রকৌশলীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিতর্কের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এই বিতর্কের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো, ডিপ্লোমা টেকনোলজিস্টদের নিজেদেরকে ‘প্রকৌশলী’ হিসেবে দাবি করা এবং উচ্চতর পদে পদোন্নতি চেয়ে আন্দোলন করা। এই প্রেক্ষাপটে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম এই দুই পেশার ভিন্নতা ও তাদের নিজ নিজ ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

 

ডিপ্লোমা টেকনোলজিস্ট: যোগ্যতা ও বাস্তবতা

ড. সিরাজুল ইসলাম উল্লেখ করেন যে, ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তির জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা হলো এসএসসি পাস, যা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় এইচএসসি পাসের চেয়ে দুই বছরের কম শিক্ষা। দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে, সাধারণত যারা এইচএসসিতে ভালো ফল করতে পারে না, তারাই এই কোর্সটি বেছে নেয়। তবে তিনি মনে করেন, নিম্নমানের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনের চেয়ে ডিপ্লোমা টেকনোলজিস্ট কোর্স করা অনেক বেশি যুক্তিযুক্ত। এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সহায়ক হতে পারে।

 

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড এবং পেশার স্তরবিন্যাস

আন্তর্জাতিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যালায়েন্স (আইইএ) কারিগরি পেশাজীবীদের তিনটি ভিন্ন স্তরে ভাগ করেছে:

  1. পেশাদার প্রকৌশলী: যারা 'ওয়াশিংটন অ্যাকর্ড'-এর আওতায় পরিচালিত হন।
  2. ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজিস্ট: যারা 'সিডনি অ্যাকর্ড'-এর আওতায় পরিচালিত হন।
  3. ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনিশিয়ান: যারা 'ডাবলিন অ্যাকর্ড'-এর আওতায় পরিচালিত হন।

এই মানদণ্ড অনুযায়ী, ডিপ্লোমা টেকনোলজিস্টরা মূলত দ্বিতীয় স্তরের পেশাজীবী এবং নিজেদের 'প্রকৌশলী' হিসেবে দাবি করা আন্তর্জাতিক নিয়মের পরিপন্থী ও বেআইনি।

 

ভিন্ন পেশার উদাহরণ এবং অযৌক্তিক দাবি

প্রকৌশল পেশার মতো, চিকিৎসা ও কৃষি ক্ষেত্রেও স্তরভিত্তিক পেশাজীবী রয়েছে। যেমন, 'মেডিকেল টেকনোলজিস্ট' বা 'ডিপ্লোমা কৃষিবিদ'রা তাদের নির্দিষ্ট পদে কাজ করেন। তারা কখনো সরাসরি মেডিকেল অফিসার বা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পান না, কারণ তাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ভিন্নতা রয়েছে। একইভাবে, একজন ডিপ্লোমা টেকনোলজিস্টকে সরাসরি সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেওয়া বা ১০ম গ্রেডে শুধু তাদের জন্য শতভাগ পদ সংরক্ষণ করা অযৌক্তিক। এই ধরনের সিদ্ধান্ত অন্যান্য পেশাতেও একই ধরনের অন্যায্য দাবির পথ খুলে দিতে পারে।

 

প্রকৌশলী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা

বুয়েট বা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ হলো নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা এবং দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি করা। রিকশার নকশা বা ড্রোন তৈরির মতো কাজগুলো তাদের গবেষণার একটি অংশ মাত্র। বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠান যেমন নাসা, বোয়িং, রোলস রয়েস এবং সিলিকন ভ্যালিতে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট প্রকৌশলীরা সুনামের সাথে কাজ করছেন। পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্পে বুয়েটের অধ্যাপকরা পরামর্শক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

অন্যদিকে, ডিপ্লোমা টেকনোলজিস্টরা মাঠ পর্যায়ে বাস্তব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন। এই দুই পেশার স্বতন্ত্র ভূমিকা রয়েছে এবং উভয়েরই সমান গুরুত্ব রয়েছে।

ড. ইসলাম মনে করেন, ডিপ্লোমা টেকনোলজিস্টরা যদি নিজেদের যোগ্যতার অধিক সুযোগ-সুবিধা না চেয়ে, বরং কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে নিজেদের পেশার পরিধি ও মান বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করেন, তবে তা দেশের জন্য আরও বেশি ফলপ্রসূ হবে।