ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ঢাকসু) নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ—প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ঢাকসু নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রসমাজকে। এই সংসদ কেবল ছাত্র অধিকার আদায়ের ক্ষেত্র নয়, বরং জাতীয় নেতৃত্ব গঠনের অন্যতম আঁতুড়ঘরও বটে।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে, দীর্ঘ সময় ধরে ঢাকসু নির্বাচন স্থবির হয়ে পড়েছিল। ফলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম শিক্ষার্থী নিজেদের প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় ছাত্রসমাজ জাতীয় রাজনীতিতেও তার ইতিবাচক প্রভাব হারিয়েছে। এক সময় যে ছাত্ররাজনীতি ছিল ন্যায়বিচার ও অধিকার প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার, তা ধীরে ধীরে দলীয় রাজনীতির ছায়াতলে আটকে গেছে।
এখন প্রশ্ন হলো—এই নির্বাচন কি ছাত্ররাজনীতিকে পুনর্জাগরণের সুযোগ করে দেবে? সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রকৃত প্রতিনিধি বেছে নিতে পারবে। সেই প্রতিনিধি কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর দূত হবে না, বরং শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় সোচ্চার কণ্ঠস্বর হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ, শিক্ষার মানোন্নয়ন, আবাসন ও কল্যাণমূলক কার্যক্রম, যৌক্তিক দাবিদাওয়ার আন্দোলন—এসবই হওয়া উচিত নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রধান এজেন্ডা।
আমরা ভুলে গেলে চলবে না, ঢাকসু কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো নয়; এটি ভবিষ্যৎ জাতীয় নেতৃত্বের পাঠশালা। এখানেই গড়ে ওঠে আগামীর রাষ্ট্রনায়ক, চিন্তক ও সমাজকর্মী। তাই এ নির্বাচনকে যদি প্রহসনে পরিণত করা হয়, তবে তা হবে কেবল ছাত্রসমাজ নয়, গোটা জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
অতএব, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, রাজনৈতিক দল এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের উচিত নির্বাচনকে ঘিরে আস্থা ফিরিয়ে আনা। শিক্ষার্থীদের স্বাধীন মতামত প্রকাশের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। গণতন্ত্রের চর্চা এখানে প্রাণবন্ত হলে সেটির ইতিবাচক স্রোত ধীরে ধীরে জাতীয় জীবনেও প্রবাহিত হবে।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র আজ নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রথম ধাপ হতে পারে ঢাকসু নির্বাচন। যদি এই নির্বাচন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক চর্চায় রূপ নেয়, তবে বলা যায়—ছাত্ররাজনীতির নবজাগরণ শুরু হবে এখান থেকেই
আপনার বিজ্ঞাপন এখানে