70°F শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মেনু

ডেঙ্গুতে মৃত্যু বাড়ছে প্রতিদিন, তবুও টিকা ব্যবহারে পিছিয়ে বাংলাদেশ

Online Desk, Boston Bangla

প্রকাশ: ০৮ নভে ২০২৫ | নিউজটি দেখেছেন: ২১
ডেঙ্গুতে মৃত্যু বাড়ছে প্রতিদিন, তবুও টিকা ব্যবহারে পিছিয়ে বাংলাদেশ

দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, ২০২৫ সালের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩০৭ জন, আর শনাক্ত হয়েছেন ৭৬ হাজারেরও বেশি রোগী। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে, তবুও টিকা ব্যবহারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বাংলাদেশ সরকার।

বছরজুড়ে ডেঙ্গুর হুমকি

একসময় ডেঙ্গু বলা হতো মৌসুমি রোগ, কিন্তু এখন তা সারা বছরের আতঙ্ক। কীটতত্ত্ববিদদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও পানি জমে থাকা জায়গাগুলোর কারণে এডিস মশার সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এর ফলে ডেঙ্গু সংক্রমণও ছড়িয়ে পড়ছে নতুন মাত্রায়।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোশতাক হোসেন জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুর জন্য দুটি টিকার অনুমোদন দিয়েছে—‘ডেঙ্গাভেক্সিয়া’ ও ‘কিউডেঙ্গা’। তবে, এসব টিকা ব্যবহারে বয়সসীমা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
তিনি বলেন, “টিকার কার্যকারিতা সবার ক্ষেত্রে সমান নয়। তাই সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে এখনো সতর্ক থাকতে হচ্ছে।”

কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার মনে করেন, টিকা অনুমোদনের বিষয়টি শুধু স্বাস্থ্যগত নয়, রাজনৈতিক দিক থেকেও সংবেদনশীল।
তার ভাষায়, “যদি সরকার ডেঙ্গুকে মহামারি ঘোষণা করে টিকা অনুমোদন দেয়, তাহলে সেটি সরকারের ভাবমূর্তির ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। তাছাড়া এতে জনমনে আতঙ্কও বেড়ে যেতে পারে।”

বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গু ও টিকা পরিস্থিতি

বিশ্বের প্রায় চারশ কোটি মানুষ বর্তমানে ডেঙ্গু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাস করছে—এ তথ্য দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC)।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবহৃত দুটি টিকা হলো ফ্রান্সের ‘Dengvaxia’ (Sanofi-Aventis) এবং জাপানের ‘Qdenga’ (Takeda Pharmaceuticals)
তবে, বাংলাদেশ এখনো কোনো টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি। এর প্রধান কারণ—টিকার বয়সসীমা, পূর্ববর্তী সংক্রমণ শর্ত এবং সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, “Dengvaxia টিকা কেবল তাদের জন্য প্রযোজ্য, যারা আগে একবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। আর Qdenga টিকার ক্ষেত্রেও বয়সসীমা ৬ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত। ফলে এটি সার্বজনীনভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব নয়।”

বাংলাদেশে টিকার ট্রায়াল ও গবেষণা

২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের আইসিডিডিআরবি যৌথভাবে TV005 নামের একটি টিকার দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল পরিচালনা করে। এটি মার্কিন ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ (NIH) আবিষ্কৃত টিকা।
তবে ভারতীয় পর্যায়ে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা সফল হলেও, বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ব্যবহারের বিষয়ে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

অধ্যাপক মোশতাক হোসেন বলেন, “ডেঙ্গুর সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, এবং মশা নিয়ন্ত্রণে যে সীমিত সাফল্য দেখা যাচ্ছে, তাতে এখন টিকার ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে ভাবার সময় এসেছে।”

সচেতনতার বিকল্প নেই

অধ্যাপক কবিরুল বাশার মনে করেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় টিকার চেয়ে বেশি প্রয়োজন জনগণের সচেতনতা।
তিনি বলেন, “মানুষ যদি নিয়মিতভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, পানি জমতে না দেয়, এবং মশারি ব্যবহার করে, তবে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেকটা কমানো সম্ভব।”