চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়, যা পরিস্থিতিকে এতটা উত্তপ্ত করে তোলে যে শেষ পর্যন্ত সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়।
ঘটনার সূত্রপাত:
শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, শনিবার দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটের কাছে এক নারী শিক্ষার্থী তার ভাড়া বাসায় প্রবেশের চেষ্টা করলে দারোয়ানের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে দারোয়ান ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করলে অন্য শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করতে যান। সে সময় দারোয়ান পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা তাকে ধাওয়া করেন। এ পর্যায়ে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি শিক্ষার্থীদের ওপর ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করে এবং মাইকে ডেকে লোক জড়ো করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সামান্য বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীরাই প্রথমে আক্রমণ শুরু করেছিল।
উত্তেজনা ও সংঘর্ষের বিস্তার:
শনিবার রাতের সংঘর্ষ থামাতে সহকারী প্রক্টর ও পুলিশ সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত সাড়ে ৩টার দিকে সেনাবাহিনীকে ডাকা হয়। সংঘর্ষ এখানেই শেষ হতে পারতো, কিন্তু স্থানীয়দের বাড়াবাড়ির কারণে উত্তেজনা প্রশমিত হয়নি।
পরদিন সকালে শিক্ষার্থীরা ও এলাকাবাসী মুখোমুখি অবস্থান নেয় এবং পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষক পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু একপর্যায়ে দুই পক্ষই আবারও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।
শনিবার রাত ও রোববারের দুই দফা সংঘর্ষে মোট ১৮০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ধরনের সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
স্থায়ী সমাধান জরুরি:
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের বারবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এর কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা, রাজনৈতিক প্রভাব এবং স্থানীয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশাপাশি সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত।
এই সংঘর্ষের আরেকটি বড় কারণ হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমিত আবাসন সুবিধা, যার ফলে অনেক শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসের বাইরে ভাড়া বাসায় থাকতে হয়। নারী শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা দ্রুত সমাধান করা গেলে এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যেতে পারে।
একটি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র নয়, এটি ভবিষ্যতের নেতৃত্ব তৈরির প্রধান ক্ষেত্র। তাই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
আপনার বিজ্ঞাপন এখানে