70°F শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মেনু

বিতর্কিত সাবেক ডিবি প্রধান হারুন: ক্ষমতার ছত্রছায়ায় নির্যাতন, দমন-পীড়ন আর অজস্র অভিযোগের ইতিহাস

Online Desk, Boston Bangla

প্রকাশ: ২১ অক্টো ২০২৫ | নিউজটি দেখেছেন: ২৬
বিতর্কিত সাবেক ডিবি প্রধান হারুন: ক্ষমতার ছত্রছায়ায় নির্যাতন, দমন-পীড়ন আর অজস্র অভিযোগের ইতিহাস

বাংলাদেশ পুলিশের এক সময়ের আলোচিত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদকে ঘিরে রয়েছে অজস্র বিতর্ক, অভিযোগ আর ক্ষমতার অপব্যবহারের গল্প। তিনি বিরোধী দল দমন ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিপীড়নের জন্য একসময় ক্ষমতাসীন মহলে “বিশ্বস্ত লাঠিয়াল” হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।

চাকরির শুরু থেকেই সাবেক ডিবি প্রধান হারুন ছিলেন নিয়মের বাইরে চলা এক বেপরোয়া কর্মকর্তা। সরকারি চাকরির বিধি বা প্রশাসনিক শৃঙ্খলা কখনোই তার কর্মপথকে প্রভাবিত করতে পারেনি। যেখানে যেতেন, সেখানে থেকেই উঠে আসত অনিয়ম, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ।

২০১১ সালের ৬ জুলাই সংসদ ভবনের সামনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচিত হন হারুন অর রশীদ। এরপর থেকেই তিনি তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ মহলে জায়গা করে নেন।

২০১৪ সালে গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে উঠে আসে বিরোধী দল দমন, নির্বিচার গ্রেপ্তার ও সভা-সমাবেশ ভণ্ডুল করার অভিযোগ। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সাময়িকভাবে প্রত্যাহার হলেও মাত্র ১১ দিনের ব্যবধানে আবারও পুনর্বহাল হন তিনি— যা ছিল প্রশাসনিক কাঠামোয় তার প্রভাবের স্পষ্ট প্রমাণ।

নারায়ণগঞ্জে দায়িত্বকালেও তার নাম জড়ায় চাঁদাবাজি, গুম-অপহরণ ও ব্যবসায়ীদের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের ঘটনায়। স্থানীয় রাজনীতিকদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও ক্ষমতার দাপটে তিনি এক সময় হয়ে ওঠেন জেলার “অঘোষিত শাসক”।

বিরোধী দল নয়, ভিন্নমতের সাংবাদিকরাও ছিলেন তার দমননীতির শিকার। ২০১৭ সালের ৪ নভেম্বর গাজীপুরের এক স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক মো. সোহরাব হোসেনকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ তোলা হয় তার বিরুদ্ধে।

এভাবেই বিরোধী মত দমন, সাংবাদিক নির্যাতন, এবং মানবাধিকারের সীমাহীন লঙ্ঘনের অভিযোগে একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন হারুন অর রশীদ। তবু এসব অভিযোগের কোনো সুষ্ঠু তদন্ত বা জবাবদিহি কখনো হয়নি। বরং সময়ের পরিক্রমায় পদোন্নতি আর পুরস্কারই পেয়ে গেছেন এই আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা।

২০২২ সালে ডিবি প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিএনপি ও হেফাজতে ইসলামের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান এবং রাজনৈতিক কর্মীদের গণগ্রেপ্তার ঘটনার কেন্দ্রেও ছিলেন তিনি। এমনকি ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আন্দোলনরত ছাত্রনেতাদের ভিডিও স্টেটমেন্ট আদায় করে দেশজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।

হারুন অর রশীদের পুরো কর্মজীবন যেন এক বিতর্কিত অধ্যায়— যেখানে রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিরোধী দল দমন এবং মানবাধিকারের ধারাবাহিক লঙ্ঘনের ইতিহাস।