70°F শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মেনু

বিবাহবার্ষিকীর দিনেই মৃত্যুদণ্ডের রায় শুনলেন শেখ হাসিনা

Online Desk, Boston Bangla

প্রকাশ: ১৭ নভে ২০২৫ | নিউজটি দেখেছেন: ২২
বিবাহবার্ষিকীর দিনেই মৃত্যুদণ্ডের রায় শুনলেন শেখ হাসিনা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার (১৭ নভেম্বর) এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল-১।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন। অন্য সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেওয়া রায়টি ঘোষিত হলো এমন এক দিনে, যেদিন শেখ হাসিনার ৫৮তম বিবাহবার্ষিকী। ১৯৬৭ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন কারাবন্দী, আর তার অনুপস্থিতিতেই মা বেগম ফজিলাতুন নেছার তত্ত্বাবধানে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় শেখ হাসিনার। বিভিন্ন সূত্র মতে, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সে সময় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাও সম্পন্ন হয় তড়িঘড়ি করে।

এই দম্পতির দুটি সন্তান—সজীব ওয়াজেদ জয় (জ. ২৭ জুলাই, ১৯৭১) ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (জ. ৯ ডিসেম্বর, ১৯৭২)।

শেখ হাসিনা পাঁচ দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন—১৯৯৬ থেকে ২০০১, এরপর ২০০৯–২০১৪, ২০১৪–২০১৯, ২০১৯–২০২৪ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সাল পর্যন্ত। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতন ঘটে তার সরকারের, এবং তিনি ভারত গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন।

গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি

২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন জুলাই-আগস্টে দেশব্যাপী গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। আন্দোলন দমনে পুলিশি গুলি, হামলা এবং দলের নেতাকর্মীদের সহিংসতায় বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে—যা সরকারের পতনের দিকে নিয়ে যায়।
এই ঘটনাগুলোকেই ভিত্তি করে গঠিত হয় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাটি।

মৃত্যুদণ্ডের রায়ের সারসংক্ষেপ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড, এবং রাজসাক্ষী হিসেবে সহযোগিতা করা সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
রায়ে বলা হয়—তিনজনের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি অভিযোগে শেখ হাসিনার এবং একটি অভিযোগে আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে।

দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ৬ অধ্যায় ও ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু হয়। ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট শুনানি শেষে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে রায় ঘোষণা করা হয়।

মামলা শুরু থেকে রায় পর্যন্ত টাইমলাইন

  • আগস্ট ২০২৪: আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন
  • ১৭ অক্টোবর ২০২4: প্রথম বিচারকাজ; শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  • শুরুতে মামলায় একমাত্র আসামি ছিলেন শেখ হাসিনা
  • ১৬ মার্চ: সাবেক আইজিপি মামুনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্তি
  • ১২ মে: তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল
  • ১ জুন: শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পাঁচ দফা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ
  • ১০ জুলাই: অভিযোগ গঠন; মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন
  • ১২ অক্টোবর: যুক্তিতর্ক শুরু
  • ২৩ অক্টোবর: যুক্তিতর্ক শেষ
  • রাষ্ট্রপক্ষ শেখ হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ড দাবি করে; রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন তাদের খালাস চান

সবশেষে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলার রায়ের মধ্য দিয়েই দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের বিচারিক নিষ্পত্তি হলো।