70°F শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মেনু

বাংলাদেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে: মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্বে বিপাকে সাধারণ মানুষ

Online Desk, Boston Bangla

প্রকাশ: ১৮ অক্টো ২০২৫ | নিউজটি দেখেছেন: ২৮
বাংলাদেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে: মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্বে বিপাকে সাধারণ মানুষ

স্বৈরশাসনের পতনের পর নতুনভাবে দায়িত্ব নেয়া অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ‘বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার’ অঙ্গীকার করেছিল। তবে বাজেট ঘোষণার চার মাস পেরোতেই সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তব চিত্র উল্টোই দেখা যাচ্ছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাজেট ঘোষণা করা হলেও সেপ্টেম্বর মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে, যা আগস্টে ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। একই সময় রপ্তানি আয় কমেছে ৪.৬১ শতাংশ, এবং মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি তলানিতে নেমে এসেছে। এর ফলে বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের হার বেড়ে গেছে উদ্বেগজনকভাবে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৩০ লাখ নতুন বেকার যুক্ত হয়েছে শ্রমবাজারে, আর ২৮% জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি এখন কার্যত লক্ষ্যহীন পথে চলছে।

রাজস্ব ঘাটতি ও ব্যাংকিং খাতের সংকট

অর্থবছরের প্রথম মাসেই রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার বেশি
অন্যদিকে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ প্রথমবারের মতো ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৩০ শতাংশ। এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৫০ শতাংশের বেশি, যা দেশের ব্যাংকিং খাতে ভয়াবহ চাপ তৈরি করেছে।

রপ্তানি আয়ে ধস

রপ্তানি খাত একসময় অর্থনীতির ভরসা হলেও, এখন সেখানে নেমেছে মন্দা। ইপিবির সর্বশেষ তথ্য বলছে, আগস্টে রপ্তানি আয় কমেছে ৩%, আর সেপ্টেম্বরে হ্রাস পেয়েছে আরও ৪.৬১%

বেসরকারি খাতের স্থবিরতা

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ঋণের উচ্চ সুদহার বেসরকারি বিনিয়োগকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। আগস্টে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে মাত্র ৬.৩৫ শতাংশে, যা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। নতুন কোনো বড় বিনিয়োগ না আসায় শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদনও কমে যাচ্ছে।

বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বাড়ছে দ্রুত

২০২২ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮.৭%, যা এখন বেড়ে ২৮%-এ দাঁড়িয়েছে। আরও ১৮% পরিবার দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে রয়েছে। গত এক বছরে প্রায় ৩০ লাখ শ্রমিক কাজ হারিয়েছে, বিশেষত নারীদের অংশগ্রহণ কমেছে সবচেয়ে বেশি।

উন্নয়ন ব্যয়েও স্থবিরতা

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে বরাদ্দের মাত্র ২.৩৯ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কম। এটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

শুধু রেমিট্যান্সে কিছুটা আশার আলো

একটি ইতিবাচক দিক হলো প্রবাসী আয় বেড়েছে ১৮.৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে ৪৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উদ্বৃত্ত রেকর্ড হয়েছে চলতি হিসাবে।
এই রেমিট্যান্স প্রবাহই এখন দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে সামান্য স্থিতি এনে দিচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মত

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজস্ব ঘাটতি, মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ স্থবিরতা ও ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এক অনিশ্চিত পথে ঠেলে দিয়েছে। তাদের মতে, কাঠামোগত সংস্কার ও সুশাসন ছাড়া টেকসই প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয়।