79°F রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মেনু

বাংলাদেশ পুলিশ: নৈতিক ও পেশাদার পুনর্গঠনের রূপরেখা

Admin, Boston Bangla

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টে ২০২৫ | নিউজটি দেখেছেন: ১৬৮
বাংলাদেশ পুলিশ: নৈতিক ও পেশাদার পুনর্গঠনের রূপরেখা

বাংলাদেশ পুলিশ: নৈতিক ও পেশাদার পুনর্গঠনের রূপরেখা

আজাদ খান

গত পনেরো বছরে স্বৈরশাসনের অধীনে বাংলাদেশ পুলিশের নৃশংস কর্মকাণ্ড জনগণের জন্য ছিল এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতা। 
বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে নিরীহ সাধারণ মানুষও ছিল এই দমন-পীড়নের শিকার। তবে ৫ আগস্টের গণবিপ্লব সেই অন্ধকার অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়েছে; 
দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন শেখ হাসিনা। গণঅন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর পুলিশের সামনে এসেছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—আবারও জনসম্মুখে ফিরে এসে সমাজে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা। 
উল্লেখযোগ্য হলো, বিপ্লবের সময় পুলিশেরও কিছু অংশ জনরোষ ও সহিংসতার মুখে পড়েছিল। 

তবু পুলিশ একটি অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান। শান্তি, ন্যায়বিচার ও সামাজিক স্থিতি রক্ষায় তাদের ভূমিকা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো—জনগণের আস্থা পুনর্গঠন করা এবং পুলিশ বাহিনীকে নৈতিকতা ও পেশাদারিত্বের এক আদর্শ রূপে রূপান্তর করা।

. সত্য উদ্‌ঘাটন, পুনর্মিলন ও জবাবদিহি

  • • সত্য ও পুনর্মিলন কমিশন গঠন করে অতীতের মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত, ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং স্বীকারোক্তি দিলে শর্তসাপেক্ষে ক্ষমার সুযোগ।
  • • অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা—ন্যায্য ট্রায়ালের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা।
  • • পাবলিক ক্ষমা প্রার্থনা—পুলিশ নেতৃত্বের প্রকাশ্য ক্ষমা ও সংস্কারের প্রতিশ্রুতি।

. কাঠামোগত পুনর্গঠন

  • • স্বাধীন নজরদারি সংস্থা—সিভিল সোসাইটি, আইন বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকারকর্মীদের সমন্বয়ে পুলিশ অ্যাকাউন্টেবিলিটি বোর্ড গঠন।
  • • ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ—আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষকে স্বাধীন সিভিল বোর্ডে রিপোর্টিং সিস্টেমের আওতায় আনা।
  • • ডিমিলিটারাইজেশন—প্যারামিলিটারি কৌশল থেকে বের হয়ে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের দিকে যাত্রা।

. পেশাগত প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন

  • • অবশ্যপাঠ্য নৈতিকতা ও মানবাধিকার প্রশিক্ষণ—সংঘাত নিরসন ও ন্যায্য বলপ্রয়োগ বিষয়ে আধুনিক কোর্স চালু।
  • • নিরবচ্ছিন্ন প্রশিক্ষণ—তদন্ত, কমিউনিটি এনগেজমেন্ট ও দুর্নীতিবিরোধী কৌশলে নিয়মিত দক্ষতা উন্নয়ন।
  • • স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া—মেধা, সততা ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকে অগ্রাধিকার দিয়ে নিয়োগ ব্যবস্থা।

. কমিউনিটি সম্পৃক্ততা ও জনসম্পর্ক

  • • কমিউনিটি পুলিশিং উদ্যোগ—অফিসারদের নির্দিষ্ট এলাকায় দায়িত্ব দিয়ে জনআস্থা পুনর্গঠন।
  • • নিয়মিত গণপরামর্শ সভা—জনগণের অভিযোগ শোনা ও যৌথ নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন।
  • • জনসচেতনতা প্রচারণা—গণমাধ্যমের মাধ্যমে সংস্কার কার্যক্রম তুলে ধরা ও ইতিবাচক পুলিশি কর্মকাণ্ড প্রচার।

. পুলিশ সদস্যদের মানসিক সহায়তা

  • • কাউন্সেলিং ও পুনর্বাসন—সহিংসতায় জড়িত বা আক্রান্ত পুলিশদের জন্য বাধ্যতামূলক কাউন্সেলিং।
  • • নৈতিক পুনঃসংগঠন কর্মশালা—মানবাধিকার ও জনসেবার মূল্যবোধে পুনঃঅঙ্গীকার।

. আইন ও নীতিমালা সংস্কার

  • • পুলিশের স্বায়ত্তশাসন আইন—রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত পুলিশ পরিচালনা নিশ্চিত করা।
  • • অ্যান্টি-টর্চার ও গুমবিরোধী আইন—কঠোর শাস্তির বিধানসহ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ।
  • • বার্ষিক অডিট ও স্বচ্ছতা রিপোর্ট—গ্রেপ্তার, শক্তি প্রয়োগ ও কার্যক্রমের নিয়মিত প্রকাশ।

উপসংহার

সত্য উদ্‌ঘাটন ও জবাবদিহি, কাঠামোগত সংস্কার, পেশাগত প্রশিক্ষণ, কমিউনিটি সম্পৃক্ততা এবং শক্তিশালী আইনি সুরক্ষার সমন্বয়ে বাংলাদেশ একটি নৈতিক ও পেশাদার পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলতে পারে। 
আন্তর্জাতিক সাফল্যের দৃষ্টান্তগুলো আমাদের পথ দেখায়, তবে প্রয়োগ হবে বাংলাদেশের নিজস্ব প্রেক্ষাপট অনুযায়ী।

 

লেখকঃ আজাদ খান, সাবেক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পুলিশ।