রোকন পাঠান
বস্টন বাংলা ডেস্ক । ১৯ অক্টোবর ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল সরকার অচলাবস্থা বা government shutdown এখন তৃতীয় সপ্তাহে পা দিয়েছে। বাজেট বরাদ্দে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় ১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই স্থবিরতা ক্রমেই রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
রাজনৈতিক অচলাবস্থা
রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, তারা এই অচলাবস্থাকে ‘ডেমোক্র্যাটদের জবাবদিহিতায় বাধ্য করার’ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। হোয়াইট হাউস সূত্র অনুযায়ী, স্বাস্থ্যখাতের ভর্তুকি, অভিবাসন নীতি, এবং ফেডারেল ব্যয় সংকোচন নিয়ে দুই দলের মধ্যে প্রধান মতবিরোধ রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যে প্রায় ২৭ বিলিয়ন ডলার ফেডারেল অর্থ বরাদ্দ স্থগিত করেছে এবং সতর্ক করেছে যে বাজেট পাস না হলে ১০,০০০ সরকারি কর্মীকে স্থায়ীভাবে ছাঁটাই করা হতে পারে। ডেমোক্র্যাট নেতারা একে ‘সংবিধানবিরোধী রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেল’ বলে অভিযোগ করেছেন। সেনেট মাইনরিটি লিডার চাক শুমার বলেন, “দেশকে জিম্মি করে ট্রাম্প বাজেট চাপিয়ে দিতে চাইছেন। এটা কেবল প্রশাসনিক নয়, নৈতিক সংকট।”
নাগরিক ও প্রশাসনিক প্রভাব
ফেডারেল কর্মীদের বড় একটি অংশ বেতন ছাড়াই কাজ করছেন বা ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। জাতীয় উদ্যান, ভিসা প্রক্রিয়া, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সেবামূলক প্রকল্পগুলো আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ। এর প্রভাব পড়ছে স্থানীয় অর্থনীতি ও বাজারেও। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, যদি এই অচলাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে তা ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ০.৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন এ অচলাবস্থাকে একধরনের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে — ডেমোক্র্যাটদের ‘সরকার বন্ধ রাখার দায়ে’ অভিযুক্ত করে ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা চলছে। লেমোঁদ পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই কৌশল নতুন নয়, তবে এবার এটি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিকল্পিত এবং গণমাধ্যমে সরাসরি প্রচারণার অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
জনমত ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
জরিপে দেখা যাচ্ছে, নাগরিকদের অর্ধেকের বেশি এই অচলাবস্থার দায় প্রশাসনের ওপর দিচ্ছেন। ওয়াশিংটন পোস্টের এক বিশ্লেষণে বলা হয়, যদি এই পরিস্থিতি আরেক সপ্তাহ স্থায়ী হয়, তাহলে তা ট্রাম্প প্রশাসনের জনপ্রিয়তায় বড় আঘাত হানতে পারে। বর্তমানে হোয়াইট হাউস, সিনেট ও কংগ্রেসের নেতাদের মধ্যে আলোচনা চললেও এখনো কোনো সমঝোতা হয়নি। সরকারের পুনরায় কার্যক্রম শুরু করতে বাজেট বিল পাস ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।
উপসংহার
এই অচলাবস্থা শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, মার্কিন রাজনীতির গভীর বিভাজন ও নেতৃত্বের সংকটের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। পরবর্তী কয়েক দিন নির্ধারণ করবে— এটি কেবল অস্থায়ী কৌশল ছিল, নাকি আমেরিকার প্রশাসনিক স্থিতিশীলতার এক দীর্ঘমেয়াদি সংকেত।
বস্টন বাংলাঃ সম্প্রীতি সমৃদ্ধির যোগসূত্র।
আপনার বিজ্ঞাপন এখানে