সম্পাদকীয় | Boston Bangla
মানব সভ্যতার ইতিহাসে কিছু কিছু যুদ্ধ কেবল গোলাবারুদের লড়াই নয়, তারা হয়ে ওঠে বিবেক ও অমানবিকতার মধ্যকার সংঘর্ষ। আজ প্যালেস্টাইন এবং ইসরাইল-ইরান সংঘর্ষ সেই জায়গায় উপনীত হয়েছে, যেখানে একপক্ষ শুধু ভূখণ্ডের দখল নয়, পরাজিত করতে চায় বিশ্ব মানবতার সর্বশেষ প্রতিরোধ।
গাজায় হাজার হাজার শিশুর মৃত্যুর পরেও যখন বিশ্ব শক্তিগুলো মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন তা আর শুধু রাজনৈতিক ব্যর্থতা নয়, এটি মানবিকতার লজ্জাজনক পতন। জাতিসংঘের প্রস্তাব, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের ব্যাখ্যা—সবকিছু যেন কাগজে লেখা মৃত ভাষা মাত্র, যখন রাস্তায় একজন রক্তাক্ত শিশুর কান্না অব্যক্তই থেকে যায়।
ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতি কেবল একক কোনো রাষ্ট্রীয় স্বার্থের লড়াই নয়। এটি এক ভয়ঙ্কর ধারা, যেখানে আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে কূটনীতি, সহনশীলতা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার শেষ আশা। পশ্চিমা বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো যেন নির্লজ্জ নীরবতায় এই আগুনে ঘি ঢালছে—অস্ত্র বিক্রির হিসাব মিলিয়ে নিচ্ছে, অথচ চোখ বন্ধ রাখছে মানবিক বিপর্যয়ের দিকে।
এইসব যুদ্ধবাজ শক্তিগুলোর জয় মানে কিসে? আরেকটি ভূখণ্ড দখল? একটি পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংস? না, তাদের জয় মানে হবে বিশ্ব বিবেকের পরাজয়। তারা জিততে চায় মানবতার দেহ ছিন্নভিন্ন করে। তারা জিততে চায় শিশুদের কবরের সংখ্যা বাড়িয়ে। তারা জিততে চায় নীরব বিশ্বকে দেখিয়ে যে, ক্ষমতা আর প্রভাব থাকলে সবকিছু বৈধ করা যায়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—আমরা কী মানবতা হারাতে প্রস্তুত? একটি সভ্য বিশ্ব কী এই হিংস্রতা ও নিষ্ঠুরতার কাছে নতি স্বীকার করবে? আমরা কি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এমন একটি লজ্জার ইতিহাস উপহার দেব, যেখানে সত্য ও সহানুভূতির জন্য কেউ দাঁড়ায়নি?
আজ এই সম্পাদকীয়র মাধ্যমে আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই: বিশ্ব বিবেক যদি আজও চুপ থাকে, তবে এ জয় হবে অন্ধকারের জয়, হেরে যাবে আলোর শেষ কণাটিও।
রোকন পাঠান, সম্পাদক, বোস্টন বাংলা
আপনার বিজ্ঞাপন এখানে