আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রাণহানির মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। রোববার (৩১ আগস্ট) রাতে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ২৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০০ জন। দেশটির তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আনাদোলু এজেন্সিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় রাত ৭টা ১৭ মিনিটে আঘাত হানে। এর উপকেন্দ্র ছিল পূর্ব আফগানিস্তানের জালালাবাদ শহরের ২৭ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর-পূর্বে এবং ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল মাত্র ৮ কিলোমিটার। shallow গভীরতার কারণে ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল বেশ বেশি, যা আশপাশের বেশ কয়েকটি প্রদেশে ব্যাপকভাবে অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৬.০।
আফগানিস্তানের কুনার প্রদেশের নূর গাল, সাওকি, ওয়াতপুর, মানোগি এবং চাপা দারা জেলাগুলোতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভূমিকম্পের কিছুক্ষণ পর একই এলাকায় অন্তত দুটি শক্তিশালী আফটারশক অনুভূত হয়, যার মধ্যে একটি ছিল রিখটার স্কেলে ৫.২ মাত্রার। এর ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। সাওকি জেলার দেওয়াহ গুল এবং নূর গুল জেলার মাজার দারা এলাকায় ভূমিধসে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকারী দলগুলোর সেখানে পৌঁছানো ব্যাহত হচ্ছে।
আফগান প্রশাসনের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক বার্তায় বলেন, “দুঃখজনকভাবে, আজ রাতের ভূমিকম্পে আমাদের কয়েকটি পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।” তিনি আরও জানান, স্থানীয় প্রশাসন, সাধারণ মানুষ এবং পার্শ্ববর্তী প্রদেশগুলো থেকে আসা সহায়তা দল একযোগে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা পাঠিয়েছে এবং দুর্গত এলাকাগুলোতে জরুরি ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় জরুরি চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন, অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা এবং খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ নিশ্চিত করার কাজ চলছে। তবে ভূমিধস ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
এদিকে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি এখন আফগানিস্তানের দিকে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশগুলো আফগানিস্তানকে মানবিক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
ভূমিকম্প-পরবর্তী সময়ে আফটারশক হতে পারে এমন আশঙ্কায় জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানিয়েছে, পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা সময়কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তুত রয়েছে উদ্ধার ও ত্রাণ বাহিনী।
এই ভয়াবহ দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে আফগান প্রশাসন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
আপনার বিজ্ঞাপন এখানে