79°F বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মেনু

নতুন মেরুকরণের পথে রাশিয়া-চীন-ভারত: ট্রাম্পের চাপ উপেক্ষা করে কৌশলগত ঐক্য

Admin, Boston Bangla

প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৫ | নিউজটি দেখেছেন: ৩
নতুন মেরুকরণের পথে রাশিয়া-চীন-ভারত: ট্রাম্পের চাপ উপেক্ষা করে কৌশলগত ঐক্য

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর বাণিজ্যিক একচেটিয়াপনীতির রোষ থেকে রেহাই পায়নি এমনকি দেশটির ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও। যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক, একতরফা হুমকি ও রাজনৈতিক চাপে পড়েছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ। তবে এসব চাপকে পাত্তা না দিয়ে এবার এক কৌশলগত মেরুকরণের পথে হাঁটছে এশিয়ার তিন প্রভাবশালী শক্তি—রাশিয়া, চীন ও ভারত।

দীর্ঘ ছয় বছর পর চীন সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সফর এমন এক সময় হতে যাচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনা অব্যাহত রাখার কারণে ভারতের ওপর নতুন করে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

এই প্রেক্ষাপটে রুশ প্রশাসনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আমরা ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক হুমকিমূলক বিবৃতি শুনছি, যেগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশকে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এসব হুমকি আমরা বৈধ ও গ্রহণযোগ্য মনে করি না।”

তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অধিকার আছে নিজেদের বাণিজ্যিক সঙ্গী নির্ধারণ করার। কোনো তৃতীয় পক্ষের জাতীয় স্বার্থে সে সিদ্ধান্ত বাধাগ্রস্ত হওয়া উচিত নয়।”

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, পেসকভ সরাসরি ভারতের নাম না নিলেও তাঁর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, রাশিয়া এই সংকটময় মুহূর্তে ভারতের পাশে রয়েছে।

চলতি মাসের ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত হবে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলন। এতে অংশ নিতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি ও ভ্লাদিমির পুতিন। দুই দেশের নেতার পাশাপাশি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের উপস্থিতিও এই সম্মেলনের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা ও চাপপ্রয়োগমূলক কূটনীতির কারণে বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন এক ধারা তৈরি হচ্ছে। একসময়ের যুক্তরাষ্ট্রঘেঁষা ভারত এখন স্পষ্টভাবে চীন-রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কৌশলগত সংলাপে এগিয়ে যাচ্ছে।

২০২০ সালে লাদাখ সীমান্তে চীন ও ভারতের সেনাদের সংঘর্ষের পর দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কে ফাটল ধরলেও এখন সেই সম্পর্ক জোড়া লাগানোর চেষ্টা স্পষ্ট। গত বছর রাশিয়ার ব্রিকস সম্মেলনে মোদি ও শি জিনপিংয়ের বৈঠকের পর থেকেই সীমান্ত ইস্যুতে নতুন কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে।

এসসিও সম্মেলনে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং সীমান্ত উত্তেজনা হ্রাসসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের পৃথক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না কূটনৈতিক সূত্রগুলো।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের ঐক্য যদি দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকে, তবে তা বিশ্বরাজনীতির ভারসাম্যে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত হতে পারে।