82°F বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মেনু

জেলেনস্কির সঙ্গে কেন বৈঠকে অনাগ্রহ পুতিনের?

Online Desk, Boston Bangla

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৫ | নিউজটি দেখেছেন: ৩
জেলেনস্কির সঙ্গে কেন বৈঠকে অনাগ্রহ পুতিনের?

হোয়াইট হাউসে আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সরাসরি আলোচনা আয়োজনের সম্ভাবনা নিয়ে একমত হয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট নেতারা। কিন্তু বৈঠকের পরপরই রাশিয়ার পক্ষ থেকে যে প্রতিক্রিয়া এসেছে, তা এই সম্ভাবনাকে আবার অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

ক্রেমলিন উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ সাংবাদিকদের জানান, আলোচনার সুযোগ রেখে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যে সংলাপের স্তর বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। তবে তিনি কোনোভাবেই রাষ্ট্রপ্রধান পর্যায়ের বৈঠকের ইঙ্গিত দেননি।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভও পরে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা আলোচনার কোনো ফর্ম প্রত্যাখ্যান করি না, তবে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুত করতে হয়।” এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে পুতিন-জেলেনস্কি সরাসরি বৈঠকের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

রাশিয়ার এমন অবস্থান খুব একটা বিস্ময়কর নয়। কারণ, এই যুদ্ধ শুরু করেছিলেন স্বয়ং পুতিন- যিনি দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করেন। তিনি বহুবার দাবি করেছেন, ইউক্রেন রাশিয়ার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিক পরিচয়ের অংশ- যা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াকে তিনি একটি “ঐতিহাসিক ভুল” হিসেবে দেখেন।

বিশ্লেষকদের মতে, যদি পুতিন জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় বসেন, তাহলে সেটি হবে একধরনের ‘পরাজয় স্বীকার’। কারণ তিনি বহুবার জেলেনস্কিকে অবজ্ঞা করেছেন এবং ইউক্রেনের অস্তিত্বকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।

চাথাম হাউসের রাশিয়া-ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক ওরিসিয়া লুতসেভিচ মনে করেন, “যদি পুতিন বৈঠকে বসেন, তাহলে তা হবে এক ধরনের কূটনৈতিক স্ববিরোধিতা। কারণ যার সঙ্গে এতদিন ‘অবৈধ নাৎসি নেতা’ বলে প্রচার চালানো হয়েছে, তার সঙ্গে বৈঠক মানেই নিজের অবস্থান থেকে সরে আসা।”

এ ছাড়া, রুশ জনগণের দিক থেকেও একটি বড় চাপ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় প্রচারে ইউক্রেন ও জেলেনস্কিকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার পর হঠাৎ বৈঠকে বসা জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে।

ক্রেমলিন বরাবরই জেলেনস্কির বৈধতা অস্বীকার করে এসেছে। ইউক্রেনে সামরিক আইনের কারণে নির্বাচন স্থগিত থাকাকে তারা ‘অবৈধ’ বলছে এবং শান্তি আলোচনার পূর্বশর্ত হিসেবে নতুন নির্বাচন দাবি করছে।

কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের বিশ্লেষক তাতিয়ানা স্তানোভায়ার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পুতিন এই যুদ্ধকে শুধুমাত্র ইউক্রেনের বিরুদ্ধে নয়, বরং পুরো পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে বলে মনে করেন। তার মতে, “জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসে কোনো লাভ নেই, বরং পুতিনের নজর ট্রাম্পের দিকে। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, ট্রাম্প ইউক্রেনকে চাপ দিতে পারেন রাশিয়ার শর্ত মেনে নেওয়ার জন্য।”

এদিকে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে আলোচনার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছেন। যদিও তিনি পরে বলেছেন, “শেষ সিদ্ধান্ত তাদের- আমরা তো সাত হাজার মাইল দূরে।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এখনই সরাসরি বৈঠকে বসার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। কারণ, পুতিন যুদ্ধ বন্ধের বিনিময়ে কোনো ধরনের ছাড় দিতে রাজি নন। বরং পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা অনেক ক্ষেত্রেই শিথিল হচ্ছে এবং রাশিয়া সামরিক অভিযান আবারও তীব্র করছে। সোমবার রাতেই ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে রাশিয়া ২৭০টি ড্রোন এবং ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।

সব মিলিয়ে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে শান্তি আলোচনা কতটা এগোবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে যদি ট্রাম্পের মধ্যস্থতা ব্যর্থ হয়, তখন প্রশ্ন উঠবে- এই যুদ্ধে নতুন মোড় নেওয়ার দায়ভার কার ওপর পড়বে?

তথ্যসূত্র: সিএনএন