ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে কূটনৈতিক সমাধান না এলে দেশটির ওপর জাতিসংঘের পুরনো নিষেধাজ্ঞা আবারও কার্যকর হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইউরোপের তিনটি প্রধান শক্তিধর দেশ—ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি। সম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিব ও নিরাপত্তা পরিষদকে পাঠানো একটি যৌথ চিঠিতে তারা জানিয়েছে, ইরানকে কোনোভাবেই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সুযোগ দেওয়া হবে না এবং এই লক্ষ্যে সবধরনের কূটনৈতিক পথ ব্যবহার করা হবে।
চিঠিতে বলা হয়, ইরান যদি আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)–র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করে এবং ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির (জেসিপিওএ) শর্ত ভঙ্গ করে, তবে আগামি আগস্টের শেষ নাগাদ তার বিরুদ্ধে ‘স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম’ ব্যবহার করে আগের নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহাল করা হবে। এসব নিষেধাজ্ঞার আওতায় অস্ত্র আমদানি-রপ্তানি, পারমাণবিক প্রযুক্তির সরবরাহ এবং আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং কার্যক্রমে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ নোয়েল ব্যারো চিঠির একটি অনুলিপি প্রকাশ করে বলেন, “ইরানকে কোনো পরিস্থিতিতেই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের অনুমতি দেওয়া যাবে না। যদি তারা আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মানতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ১০ বছর আগে শিথিল করা নিষেধাজ্ঞা আবার কার্যকর করা হবে।”
২০১৫ সালের ঐতিহাসিক চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি স্বাক্ষর করেছিল। এই চুক্তির আওতায় ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত রাখবে এবং এর বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হবে। তবে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে একতরফাভাবে সরে যাওয়ার পর চুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
এদিকে, চলতি বছরের জুন মাসে ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিভিন্ন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালালে তেহরান পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় আইএইএর সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। যদিও পরবর্তীতে সংস্থাটির উপ-মহাপরিচালকের তেহরান সফর ও নতুন করে আলোচনার ইঙ্গিত মিলেছে।
তবে ইরান বলছে, ইউরোপীয় দেশগুলোর কোনো আইনি ভিত্তি নেই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের। জাতিসংঘে পাঠানো এক চিঠিতে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, “চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এখন আর ইউরোপীয় দেশগুলোর স্ন্যাপব্যাক ব্যবহারের সুযোগ নেই।” ইউরোপীয় দেশগুলো এই বক্তব্য ‘ভিত্তিহীন’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, তারা জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুসারে বৈধভাবেই নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনার অধিকার রাখে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরান ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে আগস্টের শেষ নাগাদ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হলে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন সংকট দেখা দিতে পারে, যা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলবে।
আপনার বিজ্ঞাপন এখানে