79°F রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মেনু

গাজায় ফের ভয়াবহ হামলা, শহর ছাড়ছে হাজারো ফিলিস্তিনি

Online Desk, Boston Bangla

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টে ২০২৫ | নিউজটি দেখেছেন: ২৫
গাজায় ফের ভয়াবহ হামলা, শহর ছাড়ছে হাজারো ফিলিস্তিনি

গাজা সিটি আবারও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে — ইসরায়েলি বিমান ও স্থল হামলায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিশন এই সংঘাতকে ‘গণহত্যার’ সংজ্ঞায় রেখেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে তীব্র নিন্দা পাচ্ছে, তবু হিংসা থামার লক্ষণ নেই।

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে দেখা গেছে—আসবাবপত্র ভর্তি ভ্যান, ঘোড়ার গাড়ির মতো সরঞ্জাম ও সামান্য ব্যাগপত্র হাতে নিয়ে বহু পরিবার দক্ষিণ দিকের আল-রাশিদ সড়ক বরাবর গমন করছে। ধ্বংসস্তূপ আর কালো ধোঁয়ার মাঝেই এই পালান যেন জীবন রক্ষা করার চেষ্টাই বেশি—নাগরিকরা মৃত্যুর পাশ কাটিয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন।

শুরুতে অনেকেই শহর ছেড়ে দখল এড়াতে শহরেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু বহুতল ভবন, বাড়ি ও অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়া ভয়াবহ বোমাবর্ষণের মুখে, তাঁদের মধ্যে অনেকেই বাধ্য হয়ে শহর ত্যাগ করছেন। দক্ষিণে সরে গেলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত নয়—রাফাহ ও খান ইউনিসে ভিড়ের মধ্যে থাকা আল-মাওয়াসি শিবিরেও ইসরায়েলি হামলা হয়েছে; ফলে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ আবার গাজা সিটিতেই ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে।

অপরদিকে, মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) একদিনের হামলায় কমপক্ষে ৯১ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। উপকূলীয় সড়ক ধরে পালানোর সময়ও মানুষের গাড়িতে হামলা চালানো হয়। ওইদিন প্রায় ১৭টি আবাসিক ভবন ধ্বংসপ্রায়—যার মধ্যে পূর্ব গাজার তুফফাহ এলাকার ঐতিহাসিক আইবাকি মসজিদও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।

সেনা আরও সবধরনের শক্তি ব্যবহার করছে—উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিকগুলোতে বিস্ফোরক বোঝাই রোবট ছোঁড়া হয়েছে বলে মানবাধিকার সংস্থা ইউরোমেড মনিটর জানিয়েছে। তাদের ধারণা অনুযায়ী, প্রতিটি রোবট দিয়ে একাধিক বাড়ি ধ্বংস করা সম্ভব—প্রতিবেদনে বলা হয়েছে অন্তত ১৫টি রোবট মোতায়েন করা হয়েছে।

গাজার সরকারি গণমাধ্যম বলছে, প্রথম দফার সংঘর্ষের পরে প্রায় ১০ লাখ মানুষ ধ্বংসস্তূপে পরিপূর্ণ গাজা সিটিতে ফিরেছিলো। কিন্তু বর্তমানে সেখানে ঠিক কতজন রয়েছেন—একটি স্পষ্ট চিত্র নেই; তথ্যসূত্র ভিন্ন ভিন্ন। ইসরায়েলি সেনারা দাবি করছে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ শহর ত্যাগ করেছে; অন্যানত্র সূত্র বলছে অনেকেই শহরের কেন্দ্র ও পশ্চিম অংশেই আশ্রয় নিয়েছেন এবং প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার পুরোদমে গাজা ছেড়ে গেছেন।

একই সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনী আকাশপথ থেকে ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানবাহনের ভিডিও প্রকাশ করেছে—যা শহরের ভেতরে তাদের অগ্রগতির প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে যে, গাজা সিটির ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় তাদের কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। সেনা মুখপাত্র এফি ডেফ্রিন জানান, “যতদিনই লাগে, আমরা গাজায় অভিযান চালিয়ে যাব।”

এই পরিস্থিতি প্রমাণ করে—গাজায় চলমান অপারেশন শুধুমাত্র সামরিক অভিযান নয়; এটি ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্বকে বহুমাত্রিকভাবে প্রভাবিত করছে। জাতিসংঘের ‘গণহত্যা’ আখ্যা ও আন্তর্জাতিক সমালোচনার পরও হামলার তীব্রতা কমেনি, এবং সেসময় গাজার সাধারণ মানুষের দুর্দশা ক্রমশ বাড়ছে।

তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা