79°F রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মেনু

দোহায় ইসরাইলি হামলা: উপসাগরের ভূরাজনীতিতে নতুন বাস্তবতার সূচনা

Online Desk, Boston Bangla

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টে ২০২৫ | নিউজটি দেখেছেন: ২৮
দোহায় ইসরাইলি হামলা: উপসাগরের ভূরাজনীতিতে নতুন বাস্তবতার সূচনা

সীমার সব পরিসীমা ছাড়িয়ে গেছে ইসরাইল। কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরাইলি বিমান হামলা এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যকে। এতদিন যারা নিজেদের নিরাপদ মনে করতো, তারাও এখন আতঙ্কে। যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষা প্রতিশ্রুতি ভরসার জায়গা না থাকায় নতুন করে প্রশ্ন উঠছে উপসাগরের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা কৌশল নিয়ে।

৯ই সেপ্টেম্বর ইসরাইলের বিমান হামলার পর মুহূর্তেই দোহা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। রাস্তাজুড়ে ধ্বংসস্তূপ, জরুরি সেবাকর্মীদের ব্যস্ততা আর আতঙ্কিত নাগরিকদের কান্না—সবকিছুই যেন নতুন বাস্তবতার ছবি আঁকে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে সেদিন রাতেই ভেসে আসে ভয়াবহ সব দৃশ্য।

বিশ্লেষক ক্রিস্টিন দিওয়ান বলেন, এই ঘটনা উপসাগরের রাজনীতির জন্য সম্ভাব্য চরম সীমারেখা। তার মতে, কোন জিসিসি সদস্য দেশের ভূখণ্ডে সরাসরি আঘাত মানে গোটা উপসাগর অঞ্চলের উপর এক ধরনের সমষ্টিগত হামলা।

কাতার দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করেছে। দোহাতেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের আঞ্চলিক সদর দপ্তর, যেখানে হাজার হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করছে। তবুও হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে ওয়াশিংটন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ক্রিশ্চিয়ান উলভিক্সন মনে করিয়ে দেন, এটি নতুন কিছু নয়। ২০১৯ সালে সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় ড্রোন হামলা কিংবা ২০২২ সালে আবুধাবিতে হুথির আক্রমণের সময়ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

এই বাস্তবতায় সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত নিরাপত্তা অংশীদারিত্বে বৈচিত্র আনার পথে হাঁটছে। চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক ঘনিষ্ঠতা, রাশিয়ার সঙ্গে ওপেক প্লাস জোটে সম্পর্ক মজবুতকরণ, এমনকি ইরানের সঙ্গেও নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলেছে তারা। সৌদি আরব ২০২৩ সালে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে এবং ইয়েমেনের হুথিদের সঙ্গে আলোচনায় বসে।

অন্যদিকে কাতার বেছে নিয়েছে ভিন্ন পথ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর করেছে তারা। ২০২২ সালে বাইডেন প্রশাসন কাতারকে মেজর নন-নেটো এলাই মর্যাদা দেয়, যা বিশেষ সামরিক সহায়তার সুবিধা এনে দেয়। কিন্তু সাম্প্রতিক হামলা সে বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের উপর ভরসার সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে কার্যকর বিকল্পের অভাবে দ্বিধাদ্বন্দ্ব বাড়ছে। ইসরাইলের বিমান হামলার সেই রাত শুধু কাতারের জন্য নয়, পুরো উপসাগরীয় রাজনীতির জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

এখন প্রশ্ন উঠছে—

  • যুক্তরাষ্ট্র কি আবার তার উপস্থিতিকে বিশ্বাসযোগ্য করতে পারবে?
  • নাকি চীন ও রাশিয়ার মতো শক্তি শূন্যস্থান পূরণ করবে?

এই উত্তর আপাতত সময়ের অপেক্ষায়। তবে ৯ সেপ্টেম্বরের দোহার রাত উপসাগরের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে দীর্ঘ ছায়া ফেলেছে।